নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও লেখক প্রফেসর ড. সৈয়দ মোঃ মোজাহারুল ইসলাম ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বারোঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (১৯৪০-২০২২), মাতা তাহেরা ইসলাম (১৯৫০-২০১৬)।
তিনি নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে বাংলায় সম্মান, ১৯৯৪ সালে মাস্টার্স, ১৯৯৯ সালে এমফিল ও ২০০২ সালে পি-এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে তিনি নবাবগঞ্জ শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজে কিছুকাল শিক্ষকতা করার পর ২০০৫ সালে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালে আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২২ এবং ২৯ ডিসেম্ব ২০২২ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন লাভ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২৪ মে ২০২৩ তারিখের প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে তিনি গত ২৫ মে তিনি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
বাল্যকাল থেকেই তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষক হিসেবেও তাঁর সাফল্য উল্লেখযোগ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০০৪ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠশিক্ষক নির্বাচিত হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি লাভ করেছেন বাংলাদেশে-ভারত মৈত্রী সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (২০০৬), কবিতা ক্লাব সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮), গাঙচিল সাহিত্য পদক (২০০৮), জাতীয় কবি কাজী নজরুল সম্মাননা (২০১০), বাংলা সাহিত্য পদক (২০১৪), পশ্চিমবঙ্গ থেকে আইসিসিআই আজীবন সম্মাননা (২০১৬), স্বামী বিবেকানন্দ স্মৃতি সম্মান (২০১৭), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জেলা সম্মাননা (২০১৭), মহাত্মা গান্ধী স্বর্ণপদক (২০১৮), শেরে বাংলা পদক (২০১৯), মাদার তেরেসা পদক (২০১৯), অক্ষর সাহিত্য সম্মাননা (২০১৯), সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জেলা লেখক সম্মাননা (২০২২), শেরপুর সাহিত্য চক্রের এস. এম রাহী সাহিত্য পুরস্কার (২০২৩) সহ বেশকিছু সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
ড. ইসলামের ৫৫টি গ্রন্থ ও ৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে নবাবগঞ্জ জেলার ইতিকথা (১৯৯০), বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাচীনকীর্তি (১৯৯৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের লোকসংস্কৃতি পরিচিতি ( বাংলা একাডেমি ১৯৯৯), বরেন্দ্র অঞ্চলের লোকসংগীত ( বাংলা একাডেমি ২০০২), বরেন্দ্র অঞ্চলের লোকসংগীত আলকাপ ( বাংলা একাডেমি ২০০৪), ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত আলকাপ ( বাংলা একাডেমি ২০০০), বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা (বাংলা একাডেমি ২০১৫), আদিবাসী লোকজীবন ( মাওলা ব্রাদার্স ২০০৭), চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য (গতিধারা ২০০৭), আদিবাসী লোকসাহিত্য ( জাতীয় সাহিত্য পরিষদ ২০০৮), হাজার বছরের গম্ভীরা (গতিধারা ২০০৭), মুক্তিযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ( গতিধারা ২০০৮) উপমহাদেশের সঙ্গীতচর্চার গতিপ্রকৃতি ( গ্রন্থকুটির ২০১৮), বাংলাদেশের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ( আপন প্রকাশ ২০১৮), দুই বাংলার লোকসংগীত গম্ভীরা ( আপন প্রকাশ ২০১৯), বরেন্দ্র অঞ্চলের জনজাতি ( দিব্যপ্রকাশ ২০২১), বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত ( জে. কে বুকস, কোলকাতা ২০২১), আলকাপঃ ঐতিহ্য ও শিল্পচেতনা (জে. কে বুকস, কোলকাতা ২০২২), স্বাধীন নবাব পরাধীন নবাব (আপন প্রকাশ ২০২৩) উল্লেখযোগ্য। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে প্রকাশিত প্রথম গবেষণা পত্রিকা Journal of Nawabganj Govt. College সম্পাদনা করেন। তাঁর দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষণালব্ধ তথ্যউপাত্ত নিয়ে গড়ে উঠেছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং আঞ্চলিক ইতিহাস সংগ্রহশালা।
ড. ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বাংলা একাডেমির মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও ইতিহাস এবং বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা প্রকল্পে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এবং এশিয়াটিক সোসাইটির Encyclopedia of Liberation War of Bangladesh 1971, Bangla Pedia ও Cultural Survey of Bangladesh প্রকল্পে গবেষক ও জেলা সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, ফোকলোর গবেষণা সংসদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সহ বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের জীবন সদস্য। জাতীয় প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার।